Admin1234@ ১ নভেম্বর ২০২৫ , ৬:১৭:২৬ 58
উজ্জ্বল গির,
নীলফামারী জেলাঃ প্রতিনিধি।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নীলফামারীর জলঢাকায় টানা তিন দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমন ধানসহ আগাম শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শনিবার সকালে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হঠাৎ আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। এরপর শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি আর সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। এতে আমন ধানক্ষেত এবং সবজির মাঠগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে, অনেক জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষকদের দাবি, বাতাস ও বৃষ্টিতে তাদের সোনালী স্বপ্ন ভেসে গেছে। পাকা ও আধাপাকা ধানগাছ হেলে পড়ায় ফসল ঘরে তোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কৈমারী, ডাউয়াবাড়ী ও শৌলমারী ইউনিয়নের শত শত একর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশপাশের গ্রামগুলোতেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
কৃষকরা জানান, আধাপাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে, অনেক জায়গায় জমি পানিতে ডুবে গেছে। ফলে ফলন কমে যাওয়ার পাশাপাশি ধান শুকানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, ধান কাটার প্রস্তুতির পাশাপাশি কৃষকেরা ইতোমধ্যে শীতকালীন সবজির বীজ বপন করেছেন। উঁচু জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, টমেটো, মরিচ ও পেঁয়াজসহ নানা জাতের ফসল রোপণ করা হয়েছিল, কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সেগুলোতেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল হাজীপাড়ার কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, “আমার ৫ একর জমির ধান প্রায় কাটার উপযুক্ত ছিল। এখন মাঠে পানি জমে শিষ পচে যাচ্ছে। ফলন অর্ধেকে নেমে আসবে।” তিনি আরও জানান, বৃষ্টির কারণে শাকসবজির ক্ষেতেও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে—গাছের শিকড় নষ্ট হয়ে অনেক ফসল মারা যাচ্ছে।
একই এলাকার কৃষক মুজিবুর রহমান বলেন, “আমাদের এলাকায় প্রায় ১৫ একর জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের গাছ মাটিতে হেলে পড়েছে, অনেক শিষ ভেঙে গেছে। এখন আমরা চরম বিপাকে।”
কৈমারী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, কিছু এলাকায় ধানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে এবং বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসে জানানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে নিচু জমির অনেক ফসল পানিতে ডুবে গেছে এবং ধানের গোড়ায় পচন ধরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সমাজ বলছে, ক্ষতির মাত্রা কমাতে সরকার ও কৃষি বিভাগের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “নিম্নচাপের প্রভাবে কিছু এলাকায় ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। এতে ধানের কিছু ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত পানি নিষ্কাশন, নুয়ে পড়া ধানগাছ বাঁধা এবং অতিরিক্ত পানি জমতে না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্ষতির কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।”
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের জন্য রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছেন।













