লাইফস্টাইল

পটুয়াখালী ভার্সিটিতে, ভুয়া সনদ, ঘুষ আর পদোন্নতির গল্প; অনিয়মের চক্রে তিন কর্মকর্তা।

  Admin1234@ ২৬ অক্টোবর ২০২৫ , ১২:৫২:৪০ 70

মোঃজাকির হোসেন হাওলাদার,

দুমকী ও পবিপ্রবি প্রতিনিধি :

 

অফিসঘরের কাগজের স্তূপের নিচে অনেক গল্প লুকিয়ে থাকে—যা বছরের পর বছর কেউ খেয়াল করে না। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) রেজিস্ট্রার অফিসেও তেমনই জমে আছে এক ইতিহাস—জাল সনদ, ঘুষ, পদোন্নতি আর প্রভাবের রাজনীতি।
অভিযোগ উঠেছে, কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি শুরু করা তিন কর্মকর্তা মো. কবির সিকদার, মুহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ ও সাকিবুল হাসান ফারুক এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে আসীন। অথচ তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পদোন্নতির পথ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক।
তথ্য-নথি ও অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০০৬ সালে কবির সিকদার ও মাসুম বিল্লাহ পবিপ্রবিতে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগ দেন। পরে তাঁরা ঢাকার নীলক্ষেতের একটি দোকান থেকে ‘এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে প্রতিষ্ঠানের ভুয়া স্নাতক সনদ সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা দেন। সেই সনদ দিয়েই তাঁরা ধাপে ধাপে পৌঁছে যান সহকারী রেজিস্ট্রার (গ্রেড–৬) পদে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে কর্মরত এক এমএলএসএসের ছেলে ও আইসিটি সেলে কর্মরত সহকারী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার সাকিবুল হাসান ফারুক ‘রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে বানানো সনদ ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ আরও গুরুতর প্রশাসনের ভেতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতা ও ঘুষের বিনিময়ে এসব ভুয়া সনদ বৈধ দেখিয়ে তাঁদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে কবির সিকদার ও মাসুম বিল্লাহ ডেপুটি রেজিস্ট্রার (গ্রেড–৫) পদে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা যারা মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি, তারা আজ পিছিয়ে আছি। ভুয়া সনদধারীরা অর্থ, প্রভাব ও রাজনীতির জোরে একের পর এক পদোন্নতি পাচ্ছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”অভিযুক্ত কবির সিকদার বলেন, “আমার পদোন্নতির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। যদি আমি দোষী হই, তবে আমার পদোন্নতি দরকার নেই। এরকম আরও অনেকে আছেন—তাদেরও ভুয়া সনদ আছে, তারা ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়েছেন।” তিনি আরও দাবি করেন, আগের উপাচার্যের সময় চাপের মুখে এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ‘ব্রোকারের’ মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে তাঁদের সনদ ‘সংশোধন’ করানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সেল এর এক কর্মকর্তা বলেন, “কবির সিকদার গত ১৫ বছর রেজিস্ট্রার অফিসে প্রভাবশালী ছিলেন। নিয়োগ, পদোন্নতি, এমনকি শোকজের সিদ্ধান্তেও তার প্রভাব ছিল।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইউজিসি সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান বলেন, “ভুয়া সনদধারীদের পদোন্নতি গুরুতর প্রশাসনিক ভুল। ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া কোনো আপগ্রেডেশন বৈধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয় গুলো আমলে নিয়ে আমরা যাছাই বাছাই করছি।

আরও খবর:

Sponsered content